,

আনন্দ নিকেতন স্বপ্ন ও …………তনুজ রায়

গৌরবের আতুড় কথন…১৫ই ডিসেম্বর ১৯৯৯ সাল। থিয়েটার শাখা বরাকের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে ভ্রাম্যমান গণসংগীতের সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় আমাদের কয়েক জনের হাতে। চললো প্রস্তুতি ট্্রাক, মাইক, হারমোনিয়াম জোগাড়ের পালা। অপেক্ষায় আছে মনের কোনে কাজী নজরুলের তেজ দীপ্ত গান দূর্গম গিরী কান্তার, মরু দুস্তর ও পারাবার……। একটি হারমোনিয়াম জোগাড় করা জন্য যোগাযোগ করি পরিচিত কয়েক জনের বাসায়। অবশেষে শিবপাশা গ্রামের এক পরিচিত বাসা থেকে জোগাড় করি। সারা শহর প্রদক্ষিণ করে যখন আমরা নতুন বাজার মোড়ে আসি গলায় তখন গণসংগীতের তীব্র সুর । কিন্তুু বিধি বাম! চলমান আসেরে এসে হারমোনিয়াম নেবার জন্য তাগাদা দিচ্ছে পরিচিত ছোট ভাই। ঘটনাটা আমার মনের কোনে গভীর ভাবে রেখাপাত করে। পরদিন ১৫ই ডিসেম্বর নবীগঞ্জ জে.কে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যেগে দিবস ব্যাপী বিজয় অনুষ্ঠানমালা চলছে। মাঠের অনতি দুরেই আমাদের আড্ডা স্থল ১১ (ওসমানী রোডের রোকশানা ষ্টীল, এনালগ ল্যান্ড ফোন নাম্বার ১১)। একে একে জড়ো হচ্ছি ১১ এর বন্ধুরা। গত রাতের সেই তটা আলোচনায় উঠে আসে। তখনই ঘোষনা দেই আগামী ২১শে ফেব্র“য়ারী উদ্যাপন করব নিজস্ব হারমোনিয়ামে। নিজেদের মাঝে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। এবং আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করি একটি শিশুতোষ সংগঠন গঠন করার। শুরু হলো উপায় খোাঁজা, সহযোগী হলেন নবীগঞ্জ গণ-পাঠাগারের সংশ্লিষ্টজনেরা। আমি, মেসবাউর রহমান বাবলু, উজ্জল দাশ (সম্ভবত আরও ২/১ জন)। তৎকালীন জেলা উদীচীর সভাপতি এ্যাডঃ মানবেন্দ্র কুমার দাসের হবিগঞ্জস্থ বাসায় যাই। তারপর পরামর্শের জন্য যাই নিভৃতচারী শ্যামা প্রসন্ন দাশগুপ্ত বিধু বাবুর বাসায় যাই। তিনি একটি উক্তি করেন- আগামীতে যে দিন আসছে; যে বুঝবে না তার জন্য সহজ দিন। আর যে বুঝবে তার জন্য কঠিন। আর এই কঠিন অমোঘ সত্যকে মেনে আমরাও হাল ছাড়িনি, নতুন সৃষ্টির নেশায় বদ্ধ পরিকর। শিশু সংঠন করার ব্যাপারে পরস্পরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধু হিলে­াল এর প্রস্তাবিত নাম ”আনন্দ নিকেতন” ১৮ ফেব্র“য়ারী ২০০০ সাল আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা করে। গঠিত হয় ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি যার নেতৃত্তে¡ কাঞ্চন বণিক। ওসমানী রোডে রোকশানা ষ্টীলের পাশে বর্তমানে বিদ্যমান পোলট্রি দোকান ঘরটি মাসিক তিনশত টাকায় ভাড়া করা হয়। মাটির মেঝেতে নতুন বাজার মোড়ের ইট সলিং কাজের ঠিকাদারের নিকট ইট, মধ্যবাজার থেকে জুতার বড় কার্টন ও হোগলা এবং গোলাপী রংয়ের পর্দা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এ যেন শিশু স্বর্গ। প্রতি সাপ্তাহে শুক্রবার ক্লাস, মাসিক বেতন দশ টাকা। শিক্ষার্থী জোগাড়ের জন্য বাসায়, বাসায় যোগাযোগ। সবারই অবিচল শুভকামনা আমাদের চলার পাথেয়। কালের পরিক্রমায় চলতে চলতে আজ সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পা। আমাদের এই পথ চলায় প্রেরণা ও উৎসাহ যুগিয়েছে নবীগঞ্জের সুধীজন, ব্যাবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রবাসী সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। আপনার ভালোবাসায় একটু একটু করে ঋদ্ধ হয় আনন্দ নিকেতন। সৃজনশীলতার সাক্ষর রাখে প্রতিটি কর্মকান্ডে। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ভাবে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার মাধ্যমে জাতীয় অনেক গুনী শিল্পীদের পদচারনায় মুখরিত হয় নবীগঞ্জ। নিজেদের পরিচয় হয়ে উঠে আনন্দ নিকেতনের ছেলে। মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসাকে পূজিঁ করে আমরাও স্বপ্ন আকিঁ নতুন দিগন্তের। আপনাদের ভালোবাসার মুল্যে আনন্দ নিকেতন সৃষ্টি করেছে এক নতুন উদাহরন। প্রায় দশলক্ষ টাকা দিয়ে শিবপাশায় (আনমনু রোডে) পাঁচশতক জায়গা ক্রয় করে। দেশে কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন এভাবে জায়গা ক্রয় করেছে যা বিরল। সৃজনশীল সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ছায়ানটের আদলে আমরা আনন্দ নিকেতন কালচারাল ইনষ্টিটিউট তৈরীর স্বপ্ন দেখছি। আসুন বিগত দিনের মতো আপনাদের ভালোবাসার হাত প্রসারিত করে আমাদের গৌরবের সহযাত্রী হোন সবাই। এবং সমস্বরে সবাই বলি জয়তুঃ আনন্দ নিকেতন।


     এই বিভাগের আরো খবর